মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২১, ০২:৫৫ পূর্বাহ্ন
মামুন ॥ প্রস্তুতি শেষের পথে, এখন অপেক্ষা ভ্যাকসিনের। করোনা নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগে এশিয়াতে এগিয়ে থাকা দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। ভারতে করোনা ভ্যাকসিনের অনুমোদনের পর এখন বিশ^ স্বাস্থ্যসংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে অক্সফোর্ড। ডব্লিউএইচও অনুমোদন দিলেই দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে।
এশিয়াতে চীন, সৌদিআরব এবং অরব আমিরাত ছাড়া এখনও সেভাবে কোন দেশই ভ্যাকসিন দেয়ার কাজ শুরু করেনি। ভারত এবং বাংলাদেশে কাছাকাছি সময়েই ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে জানুয়ারিতেই ৫০ লাখ ভ্যাকসিন আসবে দেশে। একবার সরবরাহ শুরু হলে পর্যায়ক্রমে জুন পর্যন্ত তিন কোটি ভ্যাকসিন আসবে।
ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর ভ্যাকসিন আমদানির জন্য ৬০০ কোটি টাকার এলসি খুলেছে। রবিবার প্রথম চালানের ৫০ লাখ ভ্যাকসিনের দাম হিসেবে এই টাকা ব্যাংকে জমা করেছে সরকার। বিনিময়ে সেরাম ইনস্টিটিউট ব্যাংক গ্যারান্টি দেবে। এই ৫০ লাখ হলো প্রথম চালানের ভ্যাকসিন। এখন পর্যন্ত সরকার বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ভবিষ্যতে দেশের সকল নাগরিককে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে নতুন চিন্তা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ১৮ বছরের কম বয়সী, গর্ভবতী নারী, বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশীসহ ছয় থেকে সাড়ে ছয় কোটি মানুষকে এই মুহূর্তে টিকা দেয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ টিকা আনার চেষ্টা হচ্ছে তা আসলে সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষকে দেয়া সম্ভব হবে। এছাড়া আরও সাড়ে চার কোটি মানুষকে দেয়ার জন্য টিকার সংস্থান করতে হবে। এই টিকা আনারও চেষ্টা হচ্ছে। যদি আমরা সবাইকে টিকা দিতে চাই তাহলে আরও টিকা আনতে হবে। এজন্য ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সেজন্য আমরা এখনই অর্ডার দেয়ার চিন্তা করছি। এটা অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার হতে পারে, অথবা অন্য কোস সোর্স হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায় প্রথম চালানের ভ্যাকসিন কাদের দেয়া হবে সেজন্য মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন্ শ্রেণী- পেশার মানুষ ভ্যাকসিন পাবেন, তার তালিকা তৈরির পদ্ধতি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। তবে আগেভাগে তালিকা প্রকাশ করতে চায় না স্বাস্থ্য বিভাগ। ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য সুই-সিরিঞ্জসহ আনুষঙ্গিক জিনিস কেনার কাজ চলছে। ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য সারাদেশে ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী এবং সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক কাজ করবেন। ইতোমধ্যে তাদের নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশে অনেক আগে থেকেই সম্প্রসারিত টিকা প্রদান কর্মসূচী (ইপিআই) রয়েছে। দেশে ইপিআই এর সাফল্যের পাল্লা বেশ ভারি। ফলে টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রে খুব বেশি ঝক্কি পোহাতে হবে না। আর যেহেতু অক্সফোর্ডের টিকা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে দুই থেকে আট ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণের প্রয়োজন হয় ফলে প্রচলিত সংরক্ষণ ব্যবস্থাতেই সংরক্ষণ করা যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে ব্রিটেন এবং ভারতে অনুমোদনের পর এই ভ্যাকসিন দেশে নিয়ে আসতে কোন আইনগত বাঁধা নেই। তবে ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগে অবশ্যই ডব্লিউএইচওর অনুমোদন প্রয়োজন হবে। দেশে আনার পরও ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে রাখা হয়েছে। সর্বোচ্চ এক দিনের মধ্যে এই অনুমোদন পাওয়া যাবে।
ইতোমধ্যে টিকা গ্রহণকারী নির্বাচনের জন্য একটি এ্যাপ তৈরি করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এই এ্যাপের মাধ্যমে টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর সংরক্ষণ করে গ্রহীতার সম্পর্কে যাচাই বাছাই করা হবে। খুব শীঘ্রই এ্যাপটি হাতে পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখন করোনা টেস্টের জন্যও অনলাইনে নিবন্ধন করা যায়। এছাড়া করোনার সব তথ্যই সরকার অন লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করে। ভারতে যেভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগে মহড়া দেয়া হচ্ছে একইভাবে দেশেও মহড়ার ব্যবস্থা করার চিন্তাও করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
Leave a Reply